জাদিপাই
ঝর্ণার অকল্পনীয় রূপসুধা পান করতে হলে
আপনাকে কেওক্রা ডাং পাহাড় চুড়া
থেকে নেমে যেতে হবে
প্রায় ১৭০০ ফুট; পাড়ি
দিতে হবে ৭ কি.মি. বন্ধুর পথ। জাদিপাই ঝণার পথে চড়াই উৎরাই বেয়ে নেমেত
যেতে যেতে পাহাড়ি ছোট
বড় ঝিরি কলকল ধ্বনি
আপনাকে এ পথে স্বগত
জানাবে। কেওক্রা ডং থেকে পূর্বদিকের ঢাল বেয়ে কিছুদুর হাটলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু গ্রাম পাসিং পাড়া। খাড়া ঢাল আর পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথ ধরে ঘন্টা
২ হাটার পর একটি আরও একটি আদিবাসি পাড়ার দেখা পাবেন।
অধিকাংশ পর্যটক এখানে কিছুক্ষন
বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ
চলাশুরু করে। আদিবাসি
পাড়া পার হয়ে প্রায় ৩০/৪০ মিনিট হাটার
পর সমতল মাঠের মত (মালভূমি)
একটি জায়গায়। চতুর দিকে সুউচ্চ
পাহাড় মাঝখানে এই সমতল ভূমি।
সবুজ আর সবুজের সমারোহ
আপনাকে অভিভূত করবে এ
স্থানটি। এখানে স্বচ্ছ পানির
বেশ বড় দুটি ঝিরি
বয়ে চলছে। এখান থেকেই জাদিপাই ঝর্ণার শব্দ শুনা
যায়।
ঝর্ণার কলকল ধ্বনি আপনাকে বেশিক্ষণ বিশ্রাম
নিতে দিবে না। এখান থেকেই পাড়িদিতে হবে এপর্যন্ত অতিক্রম করা সবচেয়ে বিপদজনক পথ। দু’ধারে
জঙ্গিলি কাটাবন, খাড়া পাহাড়ি পথ, চিনা জোঁক মাড়িয়ে হাটতে হবে অনেকটা পথ। একপাশে পাহাড়ের
দেয়াল অন্য পাশে গভীর খাদ। বান্দরবান শহর থেকে রোমা বাজার হয়ে বগালেক পাড়ায় একরাত্রি বিশ্রাম শেষে পরদিন খুবভোরে জাদিপাই ঝর্ণার পথে ট্রাকিং শুরু করতে হবে। পথে চিংড়ি ঝর্ণা, কেওক্রা ডাং চুড়া, পথে পথে সবুজের সমারোহ, পাহাড় আর মেঘর লুকুচুড়ি, আদিবাসি পাড়া আর পথের মুগ্ধতায় কেটে যাবে সারা বেলা।
আঁকা-বাঁকা আর বিপদজনক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে যখন ঝর্ণার নিকট পৌঁছাবেন তখন.. .. ... মনভোলানো, নয়নজুরানো এ দৃশ্য ভূলবার নয়। আহ!! কি অপূর্ব!! প্রকৃতি নিজ হাতের দান। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য উপভোগ, ঝর্ণার স্বচ্ছ শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, পথের কষ্ট- ক্লান্তি, নিমিশেই উধাও হবে আপনার।
তিন ঘন্টা পাহড়ি পথে হেটে যে প্রাকৃতিক
দৃশ্য দু’চোখ ভরে উপভোগ করলাম তা প্রকাশের জন্য লেখকের কলম যথেষ্ঠ নয়। অপূর্ব, অবিস্বাস্য,
অভূতপূর্ব কোন বিশেষণেই যথার্থ নয়। প্রায় ৩৫০ ফুট উপর থেকে নেমে আসা এ পানির স্রোত
ধারাকে ঝর্ণা না বলে জলপ্রপাত বলাই সংগত।
আমাদের দেশের পর্যটকদের
অধিকাংশই সিলেটর মাধকুন্ড অথবা কক্সবাজারের হিমছরী ঝর্ণা দেখেছেন কিন্তু জাদিপাই ঝর্ণা
না দেখলে প্রকৃত ঝর্ণা দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিতই থাকবেন।
--------------
ভ্রমণের তথ্য --------------
অবস্থান : বান্দরবানের গহিনে
ভ্রমন ক্যাটাগরি : এডভেঞ্চার/
ট্রাকিং
ভ্রমনের উপযুক্ত সময় : বর্ষা কাল (মার্চ-অক্টোবর) এ সময় ঝর্ণার পূর্ণ রূপ দেখতে পাওয়া যায়।
- রাত্রি যাপন: যাদিপাই ঝর্ণার আশে পাশে থাকার তেমন কোন যায়গা নেই।আপনাকে ঝর্ণায় অবগাহনের পর বেলা থাকতে থাকতেই ফিরার পথ ধরতে হবে।রাত্রি যাপনের জন্য পাসিংপাড়া অথবা কেওকাড়া ডাং চুড়ায় পাহাড়িদের আথিথিয়তা গ্রহন করতে হবে।
- খাওয়া খরচ :
o
কেওকাড়া ডাং
চুড়ায়
পাহাড়িদের বাড়িতে
থাকা
এবং
খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
o
প্রতি
বেলা
খাবার
১২০
থেকে
১৫০টাকা।
o
রাত্রি
যাপনের
জন্য
ঘড়
ভাড়া
২০০০/২৫০০ টাকা।
- পরামর্শ : পাহাড়ের অপার্থিব এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে গ্রুপের সাথে আসতে হবে।৮/১০ জনের একটি গ্রুপ হলে নিরাপত্তা ও খরচ সাশ্রয় হবে।
- নোট : বান্দরবানের এই অংশে ভ্রমনের জন্য আপনাকে রোমা বাজার থেকে গাইড সঙ্গে নিতে হবে। আর্মি/পুলিশ ক্যাম্পে নাম রেজি. করতে হবে। রেজি. করতে 2টি মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
- কি ভাবে যাবেন : ঢাকার সায়দাবাদ, কমলাপুর, গাবতলি থেকে হানিফ, শ্যমলি, ইউনিক, সহ প্রায় সবপরিবহনের বাস প্রতি রাতেই ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে জিপে/ ট্রলারে রুমা বাজার এখান থেকে চান্দের গাড়িতে বগা লেক। বগা লেক থেকে কেওক্রা ডাং হয়ে জাদিপাই ঝর্ণা।
1 Comments
দারুন লেখার জন্য ধন্যবাদ।
ReplyDelete