বান্দরবান ভ্রমন | সর্বোচ্চতার স্বাদু পানির হ্রদ বগালেক
বগা লেক (হ্রদ) বাংলাদেশের
সর্বোচ্চতার স্বাদু পানির একটি
হ্রদ। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বগা হ্রদের
অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা
প্রায় ১২০০ ফুট। ফানেল
বা চোঙা আকৃতির পাহাড়ের
চুডায় বগা হ্রদের গঠন
অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো।অনেক খুঁজা খুঁজি করেও বগা হ্রদ সৃষ্টির
সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি। তবে উইকি পিডিয়ার মতে বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকগণ ধারনা করেন বগাকাইন (বগা)
হ্রদ মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিন্ড পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
রুমা
উপজেলার পূর্ব দিকে শঙ্খ নদীর তীর থেকে ২৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত
একটি মৌজার নাম 'নাইতং মৌজা'। এই মৌজার পলিতাই পর্বতশ্রেণীর অন্তর্গত একটি
পাহাড়ের চূড়ায় হ্রদটি অবস্থিত।
স্থানীয় আদিবাসীদের উপকথা অনুযায়ী, অনেক কাল আগে এখানে পাহাড়ের গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতো। বম ভাষায় ড্রাগনকে "বগা" বলা হয়। ড্রাগন-দেবতাকে তুষ্ট করতে স্থানীয়রা গবাদী পশু উৎসর্গ করতেন। কিন্তু একবার কয়েকজন এই ড্রাগনকে হত্যা করলে দেবতার অভিসাপে এলাকাটি জলমগ্ন হয় এবং আশে পাশের গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। উইকি পিডিয়া এবং স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে কথা বলে দু’ধরনের তথ্য পাওয়া গেলেও বগা হ্রদ যে প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই।
রহস্যময় উপকথা এবং অকল্পনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চতার স্বাদু পানির হ্রদ বগাকাইন (বগা) হ্রদকে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিং এলাকায় পরিণত করেছে। বিশেষ করে কেওক্রাডাং, তাজিংডং, তিনমুখ পিলার, জাদিপাই ঝর্ণা, পুকুর পাড়া ঝর্ণা সহ এ অঞ্চলের এক ডজনেরও বেশি ট্রেইলের জন্য বগা হ্রদে যাত্রাবিরতি ছাড়া গত্যন্তর নেই।
রুমা
বাজার থেকে বগা হ্রদ যেতে পথে বেশ কয়েকটি আদিবাসি পাড়ার দেখা পাবেন। দু পাশে সুউচ্চ
পাহাড় মাঝ খানে মেঘের স্রোত দেখতে দেখতে শেষ বিকেলে আমরা যখন বগালেকে পৌঁছেগেলাম;
তখন শরীর আর চলছিলা। কিন্তু এমন নৈসগিক পরিবেশে শরীর মন চাঙ্গা না হয়ে পারেই না। সমুদ্র
প্রৃষ্ঠ থেকে ১,২৪৬ ফুট (৩৮০ মিটার), কেওক্রাডাং-এর উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট উপরে মালভূমির উপর প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট এ লেকের স্বচ্ছ
পানি, দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার পথের ক্লান্তিকে দূর করবে । সাঁতার জানলে
নেমে পরুন লেকে, শরীরের সমস্ত ক্লান্তি নিমিশে উধাও হয়ে যাবে লেকের স্বচ্ছ শীতল পানিতে।
বগাহ্রদ এলাকায় রাত্রি যাপনের
জন্য রয়েছে পাহাড়ি আদিবাসিদের ছোট্ট একটি পাড়া। এখানে হ্রদের পাড়ে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে
পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য এগুলো ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরে
১২ থেকে ১৫ জনের রাত্রি যাপন করা সম্ভব। খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। জুম চাষের
মাধ্যমে আদি বাসিরা ধান উৎপাদ করে। সেই ধানের সুগন্ধি আতপ চাউলের সুস্বাদু ভাত আপনাকে
ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা দেবে। চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি তথা বাংলাদেশের
দক্ষিণ প্রান্ত এবং প্রতিবেশী মিয়ানমার সহ এই জনপদের অধিবাসীরা আতপ চাউলের(ভাতের মাড়
না ফেলে) বসাভাত খায়।
পাহাড়ি এলাকার ঘর গুলো মাটি থেকে
বেশ খানিকটা উঁচুতে তৈরি করা হয়। রাতে দেখতে পাবেন বগা হ্রদের আরেক রূপ। জোস্না রাতে
হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের আলো, পাহাড় আর মেঘের সাথে চাঁদের লোকোচুড়ি প্রকৃতি প্রেমিদের
জন্য এ এক বিড়ল অভিজ্ঞতা। নিস্তব্ধ পাহাড় আর প্রকৃতি আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিবে। প্রায়
১ কি.মি. লম্বা ও ৩৫০/৪০০ মিটার প্রস্থ এবং ১২৫ ফুট গভীর চর্তুদিকে পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ
পানির এ হ্রদ আপনার চিত্তকে প্রশান্তি দেবে।
হ্রদের আশেপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎস নেই। তবে ধারনা করা য়ায় বৃষ্টির পানি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি এখানে জমা হয়ে হ্রদটিকে পূর্ণ রাখে সারা বছর। এ হ্রদের পানি কখনও শুকিয়ে যায় না। উইিকিপিডিয়ার মতে এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রাস্রবন রয়েছে। প্রাস্রবনটিই এখানের পানির প্রধান উৎস। বগা হ্রদ শুধু ভ্রমন পিপাসুদের আনন্দই দেয়না পাহাড়ি এ অঞ্চলের অধিবাসিদের মিঠাপানির চাহিদা পূরণ করছে সারা বছর ধরে।
বান্দরবানে আদিবাসীদের অনেকগুলো গোত্রের বাস তার মধ্যে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খোয়াং, খুমী উল্লেখ যোগ্য। বগা হ্রদের পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশে সেনা বাহীনির একটি ক্যাম্প আছে। বান্দরবানে গুরুত্বপূর্ণ যায়গাগুলোতে সেনা ক্যাম্প রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সেনা সদস্যরা এই পাহাড়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি ক্যাম্পেই রয়েছে নামাজের ব্যবস্থ্যা সেনা সদস্যদের কল্যানে এখানে ৫ ওয়াক্ত আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হয়। যারা আরও বেশি হাটার জন্য প্রস্তুত নন তারে বগাহ্রদে অবস্থান করতে পারেন ঘুরে দেখতে পারেন হ্রদের চারপাশ। পাশেই আদিবাসীদের বেশ কয়েকটি গুত্রের বাস। বগাহ্রদের পাশে একটি বম পাড়া এবং একটি মুরং পাড়া আছে। বম, মুরং বা ম্রো, তঞ্চংগ্যা এবং ত্রিপুরাসহ অন্যান্য আদিবাসীর দেখাও এখানে পাবেন। ঘুড়ে দেখতে পারেন আদিবাসি পাড়াগুলো, তাদের জীবন যাত্রা, জুম চাষ পদ্ধতি। বগালেক পাড়াকে ঘিরেই শুরু হয় পরবর্তি যাত্রার পরিকল্পনা জাদিপাই ঝর্ণা, ডাবলফলস, কেওক্রাডাং, তাজিংডং, তিনমুখ পিলার, পুকুর পাড়া ঝর্ণা চিংড়ি ঝর্ণা সহ এ অঞ্চলের এক ডজনেরও বেশি দুর্গম আর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখমুখি
--------------
ভ্রমণের তথ্য --------------
অবস্থান
: বান্দরবানের গহিনে।
ভ্রমন ক্যাটাগরি :
এডভেঞ্চার/
ট্রাকিং
ভ্রমনের উপযুক্ত সময় : বর্ষা কাল (মার্চ-অক্টোবর) ভেসেবেড়ানো
সাদা মেঘের সাথে মিতালীর এটিই উপযুক্ত সময়।
- সতর্কতা : সাঁতার না জানলে লেকের পানিতে নামবেন না।
- কেমন খরচ :
- বগালেকে প্রতি বেলা খাবারের জন্য আপনাকে ১২০ থেকে ১৫০টাকা খচর করতে হবে
- চান্দের গাড়ি জনপ্রতি ২৫০/৩০০টাকা, গাড়িতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১৪/১৮জন
- বগালেকে ঘড় ভাড়া ২২০০/২৮০০ টাকা।
- গাইড প্রতিটি (১০/১২ জনের) টিমের জন্য ৩০০০/৫০০০ টাকা।
- পরামর্শ: পাহাড়ের অপার্থিব এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে গ্রুপের সাথে আসতে হবে।৮/১০ জনের একটি গ্রুপ হলে নিরাপত্তা ও খরচ সাশ্রয় হবে।
- নোট: বান্দরবানের এই অংশে ভ্রমনের জন্য আপনাকে রোমা বাজার থেকে গাইড সঙ্গে নিতে হবে। আর্মি/পুলিশ ক্যাম্পে নাম রেজি. করতে হবে। রেজি. করতে 2টি মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
- কি ভাবে যাবেন : ঢাকার সায়দাবাদ, কমলাপুর, গাবতলি থেকে হানিফ, শ্যমলি, ইউনিক, সহ প্রায় সবপরিবহনের বাস প্রতি রাতেই ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে জিপে/ ট্রলারে রুমা বাজার এখান থেকে চান্দের গাড়িতে বগা লেক। বগা লেক থেকে কেওকাড়া ডাং হয়ে যদিপাই ঝর্ণা।
1 Comments
বগালেক সত্যিই দুর্দান্ত এক ক্যাম্পিং স্থান যা ভুলবার নয়। আবার যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করছি।ধন্যবাদ তথ্যবহুল পোস্টটির জন্য।
ReplyDelete