বাংলাদেশের এক সময়ের সর্বোচ্চ চুড়া কেওকাড়া ডং। এখন অবশ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া ৩১৭১ ফুট।। অভিযাত্রীদলকে কেওকাড়া ডাং চুড়ায় পৌঁছাতে হলে বগালেকপাড়া থেকে আরও প্রায় ৯০০ ফুট উপড়ে উঠতে হবে, পাড়ি দিতে হবে ৪/৫ কি. মি. পথ। একপাশে খাড়া পাহাড়, আরেক পাশে হাজার ফুট গভীর খাদ। একটু অসাবধানেই ঘটতে পাড়ে বিপদ। মেঘের সাথে মিতালী আর খাড়া পাহাড় বেয়ে এগিয়ে যেতে হবে কেওকাড়া ডং এর পথে। সাদা- কালো মেঘ (বৃষ্টি নয়), হিমশীতল বাতসের পরশে মাঝে মাঝেই আপনাকে ভিজিয়ে দিবে; পরক্ষনেই আবার কাঠ ফাটা রদ্দুর শুকিয়ে নিবে ভিজে জামা কাপড়। এ অনুভূতি বলে বুঝাবার নয়।
পাহাড়ি
পথের ক্লান্তিকে ধুয়েমুছে দেওয়ার জন্য এ ট্রেইলেই রয়েছে মোহনিয় চিংড়িঝর্ণা, কেওক্রাডং অভিযাত্রীদের বিশ্রামের
অন্যতম স্থান। কাছে দুরে দৃষ্টি সীমার মাঝে আদিবাসিদের বসতি; যতদুর চোখ যায় পাহাড় আর
পাহাড়ের চূড়া। এখানকার পাহাড়ের ঢালে পাহাড়িরা নানা ধরনের ফসল আবাদ করে। ধান ছাড়াও হলুদ
আর আদার চাষ হয় এখানে। এখানকার উৎপাদিত আদা আর হলুদ দেশের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ
পূরণ করে। দুর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আদিবাসি নারীরা পিঠের ঝুড়িতে বহন করে চলছে নানা পণ্য।
পথের ক্লান্তি উধাও হয়ে যাবে কেওকারা ড়াং বিজয়ের রোমাঞ্চে। কেওক্রাডং শব্দটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় কেও মানে 'পাথর', ক্রো মানে 'পাহাড়' এবং ডাং মানে 'সবচেয়ে উঁচু'। অর্থাৎ কেওক্রাডাং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।
ইষ্ট
বাংলা রেজিমেন্ট, ৩৮ বেটেলিয়ানের মেজর এ এম মোশারফ হোসেন এর নেতৃত্বে ১৯৯৩ সনের মার্চ
মাসের ০২ তারিখে একটি সেনা অভিযাত্রি দল কেওকারাডাং বিজয় করে সেখানে একটি স্বারক পাথর
(স্মৃতি ফলক) স্থাপন করেন। স্মৃতি ফলকটিতে অভিযাত্রি দলের নিরুপন করা কেওকারাডাং এর
উচ্চতা খোদাই করা আছে ৩১৭১ ফুট। আমাদের জিপিআর এসএে উচ্চতা দেখাচ্ছিল ৩২৭৬ ফুট। সম্প্রতি
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেওকাড়া ডাং ভ্রমন করেন এবং সেখানে
একটি স্মৃতি ফলক উম্মোচন করেন। তাতে খোদাই করা :
“স্বপ্ননীলে সাজানো
উন্নত শৃঙ্গ কেওক্রাডাং,
শান্তির বাঁধনে
অমৃত জীবন,
সম্প্রীতির মহিমায়
ভাস্বর বান্দরবান।
-------------- ভ্রমণের তথ্য
--------------
অবস্থান
: বান্দরবানের গহিনে।
ভ্রমন ক্যাটাগরি
: এডভেঞ্চার/ ট্রাকিং
ভ্রমনের উপযুক্ত সময় : বর্ষা কাল (মার্চ-অক্টোবর) ভেসে বেড়ানো
সাদা মেঘের সাথে মিতালীর এটিই উপযুক্ত সময়।
কেমন খরচ :
- কেওকাড়া ডাং চুড়ায় পাহাড়িদের বাড়িতে থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
- প্রতি বেলা খাবার ১২০ থেকে ১৫০টাকা।
- রাত্রি যাপনের জন্য ঘড় ভাড়া ২০০০/২৫০০ টাকা।
পরামর্শ : পাহাড়ের অপার্থিব এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে গ্রুপের সাথে আসতে হবে।৮/১০ জনের একটি গ্রুপ হলে নিরাপত্তা ও খরচ সাশ্রয় হবে।
নোট : বান্দরবানের এই অংশে ভ্রমনের জন্য আপনাকে রোমা বাজার থেকে
গাইড সঙ্গে নিতে হবে। আর্মি/পুলিশ ক্যাম্পে নাম রেজি. করতে হবে। রেজি. করতে 2টি
মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
কি ভাবে যাবেন : ঢাকার সায়দাবাদ, কমলাপুর, গাবতলি থেকে হানিফ, শ্যমলি, ইউনিক, সহ প্রায় সবপরিবহনের বাস প্রতি রাতেই ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে জিপে/ ট্রলারে রুমা বাজার এখান থেকে চান্দের গাড়িতে বগা লেক। বগা লেক থেকে কেওকাড়া ডাং হয়ে যদিপাই ঝর্ণা।
1 Comments
দারুন লেগেছে ভাই। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
ReplyDelete